গ্রীষ্মের ছুটিতে অন্বেষাদের ক্লাসের সবাই স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়া জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের খেলা দেখতে গিয়েছে। তাদের সঙ্গে খুশি আপাত্ত আছেন। খেলার দিন পরিকল্পনা অনুসারে সকাল নয়টার মধ্যে সবাই স্টেডিয়ামে পৌঁছে গেল। নির্দিষ্ট সময়ে শুরু হলো খেলা। বাংলাদেশ টসে জিতে বোলিং নিল। টস জেতায় সবাই খুব খুশি। অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটি দারুণ খেলছে। প্রথম ওভারেই পরপর তিনটা বাউন্ডারি হাঁকান।
স্কুলের সব বন্ধু হঠাৎ চুপ হয়ে গেল। মন খানিকটা খারাপ হতে শুরু করেছে।
এমন সময়ই একটা উইকেট পড়ল। উইকেট কিপার দুর্দান্ত একটা 'কট বিহাইন্ড' করলেন। গ্যালারিতে শুরু হলো আনন্দের ঢেউ। পাশেই একজন বাদাম বিক্রেতা চিৎকার করে সেই আনন্দে যোগ দিলেন। তারপর খুশি আপা সেই আনন্দে সবাইকে বাদাম খাওয়ালেন। আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে বেজে উঠল ঢোল আর বাঁশি। শু হলো গ্যালারি জুড়ে মেক্সিকান ওয়েভ।
অস্ট্রেলিয়া পরপর দুটো ছক্কা মারলে কয়েকজন অস্ট্রেলিয়ান দর্শক ৬ লেখা প্ল্যাকার্ড তুলে ধরল। পরের তিনটে বল পরপর ডটবল হলো। তার পরের বল লাগল প্যাডে। হাউ ইজ দ্যাট! প্রত্যেকের চোখ তখন অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকদের দিকে। না, আম্পায়ার মাথা নাড়লেন নট আউট।
এরপর একে একে বল হাতে মাশরাফি, মুস্তাফিজ, তাসকিন বা সাকিবরা যখন এগিয়ে আসেন, সবাই চোখের
পলক ফেলতে ভুলে যায়, আশা করে যেন ওদের উইকেট পড়ে।
অস্ট্রেলিয়া দলের ব্যাটিং শেষে বাংলাদেশের সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ যখন চার-ছয় মারে, ক্লাসের সবাই উল্লাসে চিৎকার করে ওঠে। বাংলাদেশ দলের উইকেট পড়ে গেলে সবাই একসঙ্গে হতাশ হয় আর আফসোস করে।
খেলা নিয়ে আলোচনা
খুশি আপা: কাল যে আমরা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেট খেলা দেখলাম, তোমাদের সবার কেমন লাগল?
মিলি: আমার খুব ভালো লেগেছে।
দীপঙ্কর: আমারও ভীষণ ভালো লেগেছে, বিশেষ করে সাকিব আল হাসান যখন ব্যাটিং করছিলেন।
দীপা: আমারও খুব ভালো লেগেছে; কিন্তু যখন আমাদের উইকেট পড়ে যাচ্ছিল তখন খুব খারাপ লাগছিল। খুশি আপা: তোমরা সবাই কোন দল সমর্থন করেছ?
সবাই চিৎকার করে বলল, বাংলাদেশ!!
খুশি আপা: হয়। অস্ট্রেলিয়া দল তো খুব ভালো খেলেছে, তবু তোমরা সবাই বাংলাদেশ দলকে সমর্থন করেছ? সবাই সমস্বরে বললো হ্যাঁ, কারণ বাংলাদেশ আমাদের দল। খুশি আপা: কেন তোমাদের এমন মনে হয়?
সৃজন: খেলোয়াড়েরা আমাদের মতোই একই রকম দেখতে। আমরা সবাই বাংলা ভাষা বলতে, বুঝতে ও লিখতে পারি, বাংলায় ভাব প্রকাশ করতে পারি এবং তাদের চেহারা ও আকারও আমাদের মতোই। মামুন ও নাজিফা যোগ করল, ওরা ভালো খেললে আমাদের ভালো লাগে। আমরা আরও জোরে সমর্থন দেই। খেলোয়াড়েরা তাতে আরও উৎসাহ পান।
গণেশ ও শামীমা বলল,
খেলোয়াড়দের জার্সি বাংলাদেশের পতাকার রঙে রাঙানো। বাংলাদেশকে তা প্রতিনিধিনিত করে। ঐ জার্সি। দেখলে আমাদের গর্ব হয়। মনে হয় আমরাই খেলছি।
ফ্রান্সিস মনে করিয়ে দিল,
যখন খেলার শুরুতে বাংলাদেশের পতাকা মেলে ধরা হলো আর জাতীয় সংগীত বাজতে শুরু করণ, তখন খেলোয়াড়েরা সবাই দাঁড়িয়ে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে শুরু করলেন, আমরাও দাঁড়িয়ে গেলাম, সবাই দাঁড়িয়ে গেল। যেন আমরা সবাই এক।
আনুচিং বলল, একটা ব্যাপার আছে, এই এগারো জন আমাদের সেরা এগারো জন্য খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমরা এমনই একাত্ম হয়ে যাই যে, তাদের দুঃখ যেন আমাদের দুঃখ। তাদের আনন্দ যেন আমাদের আনন্দ। তারা জিতলে আমরা জিতে যাই। জিতে যায় পুরো বাংলাদেশ।
এবার খুশি আপা প্রশ্ন করলেন, কেন মনে হয়, বাংলাদেশের খেলোয়াড় ও দর্শক আলাদা নয়?
রহিমা বলল, তারা বাংলাদেশের সব মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করেন, সব অঞ্চলকে প্রতিনিধিত্ব করেন। মাশরাফি নড়াইলের, তামিম চট্টগ্রামের, মুস্তাফিজ সাতক্ষীরার, লিটন দিনাজপুরের। প্রতিটি বিভাগের মানুষ এই দলের
মিল-অমিলের খেলা
খুশি আপা: বই থেকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্যদের ছবি দেখিয়ে খেলোয়াড়দের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। শিক্ষার্থীরা দলে বসে আলোচনার মাধ্যমে বোঝার চেষ্টা করছে কেন তারা বাংলাদেশ। দলকে সমর্থন করছে।
নিসর্গ বলল: বাংলাদেশ তো আমাদের দল। ক্রিকেটাররা আমাদের দেশের জন্য খেলছেন।
আয়েশা বলল: আমরা দেখতে একই রকম। অস্ট্রেলিয়া দলের খেলোয়াড়েরা আমাদের থেকে বেশ আলাদা।
আদনান বলল, তোমরা দেখেছ খেলার শুরুতে আমাদের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়েছিল, যেমন আমরা স্কুলের শুরুতে প্রতিদিন জাতীয় সংগীত গাই। যখন আমি জাতীয় সংগীত শুনি, তখন আমার ভীষণ ভালো লাগে।
দীপা বললো, আমরা সবাই বাংলাদেশী। আমি মনে করি এ কারণে আমাদের খেলোয়াড়েরা জিতলে আমাদের ভালো লাগে।
ওরা সবাই তখন গোল হয়ে বসে বই থেকে সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাশরাফিদের ছবি দেখে ও আলোচনা করে মিলগুলো খুঁজে বের করতে থাকে। কথা বলতে বলতে তারা সবাই মিলগুলো খাতায় নেয় লিখে।
বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের মিল-অমিলের ছক
১ | |
---|---|
২ | |
৩ | |
৪ |
দেখা গেল, ক্লাসের সবাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সঙ্গে কোনো না কোনো মিল খুঁজে পেয়েছে। কেউ বলেছে ভাষার কথা, কেউ বলছে জাতীয়তা ও দেশের কথা, কেউ হয়তো ভৌগোলিক পরিচয়ের কথা, আবার কেউ লিখেছে খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-আশাক ও সংস্কৃতির কথা।
চলো ওদের মতো আমরাও বাংলাদেশ জাতীয় পুরুষ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে আমাদের যেসব মিল খুঁজে পাওয়া যায় সেগুলো এখানে লিখি |
---|
মিল-অমিলের কার্ড
খুশি আপা সবার খুঁজে পাওয়া মিলগুলো শুনে শুনে বোর্ডে লিখবেন। এরপর তিনি সবাইকে পোস্টার পেপারে লেখা মিল-অমিলের একটি তালিকা দেখালেন। সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে দেখে এবং পোস্টার পেপারে লেখা কোন কোন উপাদানের সঙ্গে আমাদের মিল আছে তা বলে। সে অনুযায়ী খুশি আপা পোস্টার পেপারে টিক বা ক্রস চিহ্ন নেন। শেষ হলে দেখা গেল, আসলেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে আমাদের অনেক মিল রয়েছে। এ কারণে আমরা তাদের সঙ্গে একাত্মবোধ করি।
সামাজিক পরিচয়ের তালিকা
বিষয় | বাংলাদেশ | অস্ট্রেলিয়া |
---|---|---|
জাতীয়তা | ||
সংস্কৃতি | ||
ভাষা | ||
ভৌগোলিক পরিচয় | ||
আর্থ-সামাজিক পরিচয় | ||
খাদ্যাভ্যাস | ||
নৃগোষ্ঠী | ||
জাতীয় সংগীত | ||
জাতীয় পতাকা | ||
জাতীয় প্রতীক | ||
ধর্মীয় ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক বিশ্বাস |
মেয়েদের ফুটবল
পরদিন ক্লাসে এসে খুশি আপা জানতে চাইলেন, তোমরা কি ফুটবল খেলা পছন্দ করো? ফাতেমা, দীপা, নিসর্গ, হারুন, বুশরা সবাই সমস্বরে বলে উঠল, হ্যাঁ, ফুটবল আমাদের খুব ভালো লাগে।
খুশি আপা বললেন, আজ আমরা সবাই ক্লাসে ফুটবল খেলা নিয়ে কথা বলব। সবাই খুশিতে হাততালি দিল।
খুশি আপা সবাইকে বাংলাদেশ অনূর্ধা নারী ফুটবল দলের সঙ্গে ভারত দলের ম্যাচ রিপোর্ট পড়তে দিলেন। ক্লাসের সবাই ৫/৬ জনের দলে বসে ম্যাচ রিপোর্ট পড়তে লাগল এবং বাংলাদেশের মেয়েরা লড়াই করে কীভাবে জিতেছে তা জেনে উল্লসিত হলো।
ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা | |
---|---|
বুধবার (২২ ডিসেম্বর): কমলাপুর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে সাফ অনুর্ধ্ব-১৯ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখলো বাংলাদেশ। খেলার শুরু থেকেই আক্রমণ করে আসছিল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে খেলেছে। তবে বাংলাদেশ ম্যাচের ১৬ মিনিটেই লিড পেতে পারত। ভারতের গোলরক্ষক ভুল করে বল গ্রিপে নিতে পারেননি। তহুরার নেওয়া শট ভারতের গোলরক্ষক গোল লাইনে সেভ করে। বাংলাদেশের ফুটবলারদের দাবি ছিল বল লাইন ক্রস করেছে। রেফারি অবশ্য তার অবস্থানে অনড় থাকেন। রিপ্লেতে অবশ্য দেখা গেছে বল লাইনের ওপর ছিল। তবে ৭৬ মিনিটে বল গোললাইন ক্রস করে জানেও গিয়েছিল কিন্তু সহকারী রেফারি অফসাইডের পতাকা তুললে সেই গোলটিও বাতিল হয়ে যায়। ফাইনালে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ক্রসবারও। ২৫ মিনিটে বাংলাদেশের | থ্রো ইন থেকে করা আক্রমণ সাইডপোস্টে লেগে ফেরত আসে। দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়রের শটও পোস্টে লাগে। তবে প্রথমবারের মতো দেশে অনুষ্ঠিত অনুর্ধ্ব-১৯ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে বাংলাদেশকে খালি হাতে ফিরতে হয়নি।ভারতীয় মেয়েদের কাছ থেকে বারবার বল কেড়ে নিলেও শেষ পর্যন্ত গোলের দেখা মিলছিল না বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ৭৯ মিনিটে আনাই মগিনি এগিয়ে দেন বাংলাদেশকে। রিপা ব্যাকহিল পাস করেন। আনাই মগিনি বক্সের বাইরে থেকে শট নেন। ভারতের গোলরক্ষক বলের ফ্লাইট বুঝতে পারেননি। তিনি বলে হাত লাগালেও গোল লাইন | অতিক্রম করা থেকে বিরত রাখতে পারেননি। সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে মেতে ওঠে পুরো কমলাপুর স্টেডিয়াম। শেষ পর্যন্ত এই এক গোলই বাংলাদেশের শিরোপা নির্ধারণ করে দেয়া। |
রিপোর্ট পড়ে সবাই খুব উত্তেজিত হয়ে খুশি আপাকে জানাল যে, তারা খেলাটা ভিডিওতে দেখতে চায়! খুশি আপা হেসে বললেন যে, খুবই ভালো প্রস্তাব! কিন্তু আমাদের তো সময় কম। আমরা পুরো খেলাটা সবাই একসঙ্গে ক্লাসে দেখতে পাবো না। তবে খেলার গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো আমরা ভিডিওতে সবাই একসঙ্গে শ্রেণিকক্ষে দেখতে পারি। এরপর তারা তুমুল উত্তেজনার সঙ্গে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২১ এর ফাইনালে বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচটি উপভোগ কর।
ফুটবল খেলা নিয়ে মিল-অমিলের খেলা
খুশি আপা বললেন, এবার চলো আমরা কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। বাংলাদেশের মেয়েদের কেন সবাই সমর্থন করছি তা বোঝার জন্য দলে আলোচনা করব।
প্রশ্ন |
---|
১. আমরা কোন দল সমর্থন করেছি? |
২. আমাদের দল কোনটি? |
৩. আমরা কেন এই দলকে সমর্থন করেছি? |
ক্লাসের সবাই ফুটবলার মেয়েদের সঙ্গে নিজেদের মিলে যাওয়া বৈশিষ্ট্য নিয়ে কথা বলছিল, যেভাবে জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে মিলগুলো তারা খুঁজে বের করেছিল। তবে দেখা গেল, তারা ফুটবলার মেয়েদের সঙ্গে বেশ কিছু অমিলও খুঁজে পাচ্ছে।
চলো ওদের মতো আমরাও উপরে দেওয়া ছকের
প্রশ্ন তিনটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি।
আমরা আলাদা হলেও একই
খুশি আপা তখন সবাইকে বই থেকে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব ১৯ জাতীয় নারী ফুটবল দলের মেয়েদের ছবি দেখালেন। সবাই মারিয়া, আনাই, ঋতুপর্ণা, তহুরা, অধিসহ সবার সাথে পরিচিত হলো।
খুশি আপা শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করলেন ফুটবলার মেয়েদের সঙ্গে আমাদের সবার মিল ও অমিলগুলো খুঁজে বের করতে। সবাই দলে বসে খুব উৎসাহ নিয়ে ফুটবলার মেয়েদের পরিচয় পড়ে ও ছবি দেখে। নাজিফা চলো বন্ধুরা, ফুটবলার মেয়েদের সঙ্গে আমাদের কী কী মিল অমিল আছে তা খুঁজে বের করি। নিসর্গ: হ্যাঁ, চলো আমরা একসঙ্গে খুঁজি। কাজের সুবিধার্থে চলো আমরা একটা মিল-অমিল ছক বানাই। সবাই খুব খুশি হয়ে রাজি হলো এবং কী ধরনের মিল-অমিল তা বোঝার জন্য একটা ছক বানিয়ে ফেলল।
ছক: মিল-অমিলের ছক
বিষয় বৈশিষ্ট্য | কী ধরনের মিল | কী ধরনের অমিল |
---|---|---|
জাতীয়তা | ||
সংস্কৃতি | ||
ভাষা | ||
ভৌগোলিক পরিচয় | ||
লৈঙ্গিক পরিচয় | ||
জেন্ডার | ||
আর্থ-সামাজিক পরিচয় | ||
খাদ্যাভাস | ||
নৃগোষ্ঠী | ||
বর্ণ | ||
জাতীয় সংগীত | ||
জাতীয় পতাকা | ||
জাতীয় প্রতীক |
কাজ শেষে প্রতিটি দল ছকে লেখা মিল-অমিলগুলো অন্য সবার সামনে উপস্থাপন করছে। খুশি আপা সবার কাজের প্রশংসা করলেন এবং প্রয়োজনীয় ফিডব্যাক দিলেন। ক্লাসের অন্যরাও নিজেদের কাজে ফিডব্যাক দিল। নিসর্গ: আচ্ছা বন্ধুরা তোমাদের কি মনে হচ্ছে না, মেয়ে ফুটবলারদের সঙ্গে আমাদের বেশ কিছু অমিল
আছে? কিছু অমিল থাকার পরও আমরা তাদের কেন সমর্থন করছি? মাহবুব : হ্যাঁ, কিছু মিল আছে, কিছু অমিলও আছে। তবু আমরা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের সঙ্গে একাত্মবোধ করছি।
দীপা: আমার মনে হয়, ভৌগোলিক পরিচয়, ভাষা, নিম্ন, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, খাদ্যাভ্যাস, জাতিসত্তা ইত্যাদি উপাদান এই “আমরা বোধ তৈরিতে কাজ করছে। ভারত দলের সঙ্গে আমাদের এসব বৈশিষ্ট্যের মিল নেই বলে তাদের সঙ্গে আমরা একাত্মবোধ করছি না। আর এটাই আমাদের সামাজিক পরিচয়।
খুশি আপা: আমিও তোমাদের সঙ্গে একমত। কিছু কিছু অমিল থাকা সত্ত্বেও আমাদের বৃহত্তর স্বার্থ, দেশ, ভূখণ্ড, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় একই হওয়ার কারণে আমরা ফুটবলার মেয়েদের সঙ্গে "আমরা" বোধ করছি।
চলো ওদের মতো আমরাও উপরের মিল-অমিলের ছক অনুযায়ী কাজ করি
সামাজিক পরিচয়ের নানা উপাদান
খুশি আপা বললেন, সামাজিক পরিচয়ের উপাদানগুলো কেমন করে তৈরি হয় এবং কীভাবে কাজ করে, চলো আজ আমরা সেটা নিয়ে অনুসন্ধান করি। এরপরে আপা বললেন, গত কয়েক দিনে আমরা ভিন্ন ভিন্ন মানুষরা কীভাবে 'আমরা' হই তা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। এভাবে নিজেদের সামাজিক পরিচয়ের বিভিন্ন উপাদান খুঁজে পেয়েছি। চলো আজ আমরা সামাজিক পরিচয়ের উপাদানগুলো কাগজে লিখে ক্লাসরুমের বিভিন্ন জায়গায় টাঙ্গাই।
নাজিফা, টুকটুক, রাজীব, দীপা, নিসর্গ, জামাল, হাল্কা, আনুচিৎ সবাই কাজে লেগে পড়ল। প্রত্যেকেই সাদা কাগজে এক একটি উপাদানের নাম লিখছিল। নাজিফা লিখল ভাষা, নিসর্গ লিখল দেশ, জামাল লিখল জাতীয়তা, টুকটুক লিখল খাদ্যাভ্যাস এবং হাতা লিখল নৃগোষ্ঠী। সবাই মিলে মজা করে ক্লাসরুমের বিভিন্ন স্থানে কাগজগুলো লাগিয়ে দিল।
আমার সামাজিক পরিচয়
খুশি আপা: এখন আমরা সামাজিক পরিচয়ের রেলগাড়ি' খেলা খেলব। আর ঐ যে দেয়ালে কতকগুলো বিষয়ের নাম লিখে কাগজ লাগিয়ে দিলে এগুলো হলো বিভিন্ন স্টেশন। কী বলো তোমরা?
সবাই একসঙ্গে উল্লসিত হয়ে বলল, হ্যাঁ আপা, আমরা খেলতে চাই।
সবাই ক্লাসের দেয়ালের পাশ দিয়ে একজনের ঘাড়ে অন্যজন হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। খুশি আপা ক্লাসের
মাঝখানে দাঁড়িয়ে বললেন, এবার রেলগাড়ি চলতে শুরু করবে। তার আগে তোমাদের জন্য একটি প্রশ্ন।
খুশি আপা: মনে করো, এশিয়া একাদশ আর অবশিষ্ট বিশ্ব একাদশের মধ্যে ক্রিকেট খেলা হচ্ছে। তুমি কোন দলকে সমর্থন করবে?
সবাই সমস্বরে বলল, এশিয়া একাদশ।
খুশি আপা: আচ্ছা। এবার বলো তাহলে, এক্ষেত্রে তোমাদের সামাজিক পরিচয়ের কোন উপাদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে
সবাই একসঙ্গে বলল, 'ভৌগোলিক পরিচয়।'
মিলি: আসলেই 'ভৌগোলিক পরিচয়' আমাদের সামাজিক পরিচয়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ, আগে এভাবে আমি ভাবিনি।
খুশি আপা: তোমরা ঠিক বলেছ। আমার ছোট্ট বন্ধুরা, এবার তোমাদের রেলগাড়ি চলতে শুরু করো। তারপর রেলগাড়ি বিভিন্ন 'ভৌগোলিক পরিচয় স্টেশনে থামবে।
সবাই কু ঝিক ঝিক ঝিক... কু ঝিক ঝিক ঝিক .... কু ঝিক ঝিক ঝিক বলে চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর রেলগাড়ি প্রথম 'ভৌগোলিক পরিচয়' স্টেশনে থেমে গেল।
খুশি আপা: এবার তোমাদের কাছে জানতে চাই, আমরা যখন পহেলা বৈশাখ, বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু (বৈসাবি) উদযাপন করি, তখন সামাজিক পরিচয়ের কোন উপাদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে?
মুনিয়া: আমার মনে হয়, তখন আমাদের নৃগোষ্ঠী পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
রাজীব আমারও তাই মনে হয় কারণ, আমরা সব ধর্ম, বর্ণের বাংলাদেশের মানুষ একসঙ্গে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি।
খুশি আপা: তোমরা ঠিক ঠিক বলছ। খেলাটা তোমাদের কেমন লাগছে?
সবাই সমস্বরে বলল, খুব ভালো লাগছে আপা। আমরা আরও কিছুক্ষন খেলতে চাই।
খুশি আপা: ঠিক আছে, চলো আবার শুরু করি।
সবাই আবারও কু ঝিক ঝিক ঝিক ... কু ঝিক ঝিক ঝিক.....কু ঝিক ঝিক ঝিক বলে চলতে শুরু করল।
কিছুক্ষণ চলার পর খুশি আপা বললেন, রেলগাড়ি এবার 'নৃগোষ্ঠী' স্টেশনে থামবে। সবাই আবারও একইভাবে স্টেশনে দাঁড়িয়ে পড়ল।
খুশি আপা: পৃথিবীতে নানান ভাষাভাষী মানুষ থাকে। আমরা সবাই জানি ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষার জন এদেশের মানুষেরা জীবন দিয়েছিল। এখন ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। প্রত্যেকের মাতৃভাষাই সুন্দর এবং মর্যাদাপূর্ণ। এখন বলো তো, যারা বাংলায় কথা বলে তাদের কী বলা হয়?
নাজিফা: আমি বাংলায় কথা বলি, আমি বাঙালি। আনাই: আমি চাকমা ভাষায় কথা বলি। আমি চাকমা।
হাচ্চা: আমি গারো বা আচিকু ভাষায় কথা বলি, আমি গারো।
খুশি আপা: ভাষা কি তাহলে আমাদের পরিচয় বহন করে?
সবাই একসঙ্গে বলল, হ্যাঁ আপা, ভাষা আমাদের সামাজিক পরিচয়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। খুশি আপা আমিও তোমাদের সাথে একমত। চলো রেলগাড়ি আবার চলতে শুরু করো।
সবাই সঙ্গে সঙ্গে কু ঝিক ঝিক ঝিক ... কু ঝিক ঝিক ঝিক.....কু ঝিক ঝিক ঝিক বলে রেলগাড়ি চলতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ চলার পর, খুশি আপা বললেন এবার রেলগাড়ি ভাষা স্টেশনে থামবে।
সবাই দাঁড়িয়ে গেল।
খুশি আপা: খুব ভালো। এখন বলো দেখি, যখন আমরা ঈদ, পূজা, বুত্তপূর্ণিমা, বড়দিন উদযাপন করি, তখন সামাজিক পরিচয়ের কোন উপাদান গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে?
নিসর্গ: আমার মনে হয়, এক্ষেত্রে আমাদের ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
হাচ্চা- প্রতিটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিছু আচার-রীতিনীতি আছে, যা কেবলমাত্র ওই ধর্মের অনুসারীরাই পালন করেন। তবে উৎসবে অন্য ধর্মের অনুসারীদেরকেও নিমন্ত্রণ করা যায়।
খুশি আপা: তোমাদের সঙ্গে আমিও একমত। চলো, রেলগাড়ি আবার চলতে শুরু করি। রেলগাড়ি এবার "ধর্ম" স্টেশনে থামবে। সবাই আবার কু ঝিক ঝিক ঝিক ... কু ঝিক ঝিক ঝিক..... কু ঝিক ঝিক ঝিক বলে চলতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর রেলগাড়ি 'ধর্ম' স্টেশনে দাঁড়িয়ে গেল।
খুশি আপা: মনে করো, তোমাদের কোনো একজন বন্ধু খেলোয়াড় হিসেবে অলিম্পিক গেমসে অংশ নিতে গেল। সেখানে তার কোন পরিচয়টা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হবে? আদনান: আমার মনে হয় তার জাতীয় পরিচয় ও নাগরিকত্ব এখানে গুরুত্বপূর্ণ হবে। আমরা সবাই বাংলাদেশের মানুষ, এদেশের নাগরিক।
খুশি আপা: সবাই খুব ভালো বলেছ। আমি তোমাদের সবার সাথে একমত। শেষবারের মতো আবার রেলগাড়ি চলতে শুরু করো এবং এবার রেলগাড়ি ‘জাতীয়তা' স্টেশনে থামবে।
কু ঝিক ঝিক ঝিক ... কু ঝিক ঝিক ঝিক ....কু ঝিক ঝিক ঝিক ......
বেশ কিছুক্ষন পর সবাই থেমে গেল জাতীয়তা' স্টেশনে।
খেলা শেষ করে সবাই যে যার জায়গায় বসে পড়ল। খুশি আপা: সামাজিক পরিচয়ের সব উপাদানই আমাদের সামাজিক পরিচয় গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা নিশ্চয়ই তোমরা সবাই উপলব্ধি করতে পারছ। রহিমা: জি আপা। আমি বুঝতে পারছি অবস্থা, সময় ও প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এক একটি পরিচয় একেক সময়
আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। খুশি আপা: হ্যাঁ, তার ব্যক্তিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আমাদের সামাজিক পরিচয় গড়ে ওঠে।
আমাদের নৃগোষ্ঠীগত পরিচয়
খুশি আপা: আমরা আজ খুব মজার একটা কাজ করব। তার আগে চলো, আমরা সবাই নিচের ছবিগুলো দেখে নেই।
খুশি আপা: ছবিগুলো দেখে তোমাদের কার কী মনে হচ্ছে?
সুমন: এখানে আমাদের দেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষদের ছবি দেখা যাচ্ছে।
দীপা: খাঁ, আমরা আগের শ্রেণিতে এদের সম্পর্কে জেনেছি।
খুশি আপা: তোমরা ঠিক বলেছ। চলো আজ আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করি।
নীলা, ফাতেমা, মাহবুব, নিসর্গ, সুমন ওরা সবাই দলে বসে গেল। ওরা বই থেকে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের ছবি নিয়ে তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার চেষ্টা করল। ওরা ঠিক করল, ওরা বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের নামের সঙ্গে তাদের বিশেষ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য সাজিয়ে একটা ছক বানাবে। দলে মিলে ওরা কাজ করল। পরে দলে আলোচনা করে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের মূল সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটা ছক বানিয়ে ফেলল। এরপর অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে ওরা আরও তথ্য সংগ্রহ করে ছক পূর্ণ করল।
বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের মূল বৈশিষ্ট্য কী কী? চলো মিলিয়ে দেখি;
নৃগোষ্ঠীর নাম | মূল বৈশিষ্ট্য (পোশাক, লিঙ্গ, বাসস্থান, জাতীয়তা, খাদ্যাভ্যাস, বিশেষ দিবস ইত্যাদি) |
---|---|
বাড়িতে গিয়ে ওরা প্রাথমিকের পাঠ্যপুস্তক বা ছোট বেলার বই এবং বড়দের সাহায্যে ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন নৃগোষ্ঠী সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করল। ওরা দলেও আলোচনা করল, এভাবে ওরা ছকটি পূর্ণ করল।
বইয়ের বন্ধুদের মতো চলো আমরাও উপরের ছকটি ব্যবহার করে বাংলাদেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষদের মূল সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যগুলো মিলেয়ে দেখি
অনুসন্ধানী কাজের দলীয় উপস্থাপন
ভিন্নি নৃগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য নিয়ে করা অনুসন্ধানী কাজ উপস্থাপন করার জন্যে ওরা ক্লাসের বিভিন্ন জায়গায় তাদের পোস্টার পেপারে ছক তৈরি করে টাঙিয়ে দিল। কেউ আবার উপস্থাপনে পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড ব্যবহার করল, কেউ কাগজে লিখে নিজের কাজ উপস্থাপন করল। সবাই সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল এবং মতামত দিল।
খুশি আপা: বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষদের নিয়ে কাজ করে তোমরা কী কী জানলে?
সুজন: বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে পোশাক-আশাক, ঘরবাড়ি, খাবার ও খাদ্যাভ্যাসসহ বিভিন্ন বিষয়ে অর্থাৎ জীবনযাপন প্রণালিতে বেশ পার্থক্য আছে।
দীপা: আমার মনে হয়, আমাদের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ের সঙ্গে আমাদের পোশাক, খাদ্যাভ্যাস, আচার-আচরনসহ জীবনাচরণের অনেক মিল আছে।
খাদিজা: হ্যাঁ, অনেক বৈশিষ্ট্যে আমরা একই আবার অনেক বৈশিষ্ট্যে আমরা আলাদা। তবে সবার জীবন- যাপনের প্রণালিই খুব সুন্দর। কারণ, এগুলো বৈচিত্র্যময়।
ক্লাসের সবাই একসঙ্গে বলল, আমরা মিলির সাথে একমত।
আমরা একই কেন?
খুশি আপা: তোমাদের কি জানতে ইচ্ছে হয়, আমরা যারা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মানুষ, বিশেষ করে বাংলাদেশি তারা একই রকম কেমন করে হলাম!
খাদিজা; তাইতো। এটা তো ভেবে দেখিনি।
মাহবুব হ্যাঁ, যারা অন্য মহাদেশের তারা তো দেখতে আমাদের থেকে বেশ আলাদা। নিসর্গ: আমি শুনেছি, আমাদের আদি পুরুষেরা নাকি বানর ছিল।
খুশি আপা হেসে বললেন: তাই নাকি। অনেকেই মনে করে, বানর আমাদের পূর্বপুরুষ। কিন্তু তথাটা সঠিক নয়। বানর আমাদের পূর্বপুরুষ নয়। খুশি আপা: চলো আমরা মানুষ কোথা থেকে এলো সেসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য অনুসন্ধান করি। শুরুতে চলো সবাই লুসির সাথে পরিচিত হই তার গল্পটা পড়ি।
ক্লাসের সবাই দলে বসে বই থেকে এপ জাতীয় প্রাণীর এ পর্যন্ত সবচেয়ে প্রাচীন পূর্ব পুরুষ লুসির গল্প পড়তে শুরু করল।
আফ্রিকা মহাদেশের একটি দেশের নাম ইথিওপিয়া। তরুণ গবেষক ডোনাল্ড জোহানসন ১৯৭৪ সালের ২৪শে নভেম্বর ইথিওপিয়ার হাওর এলাকায় অনেক পুরোনো একটি ফসিল কঙ্কালের গুরুত্বপূর্ণ অংশ খুঁজে পান। পরে গবেষণায় জানা যায়, এটি মানুষের পূর্বসূরি হোমিনিড গোত্রীয়। তার মাথায় মগজ ছিল কম, শরীরের কাঠামোও ছোট ছিল। তবে পায়ের হাড় প্রায় মানুষের মতোই। দুই পায়ে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারাসহ হাঁটতে পারাও ছিল তার আয়তে। খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল পাতা, ফল, বীজ, শিকড়, বাদাম ও পোকামাকড়। তার আক্কেল দাঁত থেকে বোঝা যায়, এই কঙ্কাল প্রাপ্তবয়স্কের ছিল। আনুমানিক ২১ বছর বয়সে তার মৃত্যু হয়। সম্ভবত কম ওজনের কারণেই তার মৃত্যু হয়। নৃবিজ্ঞানীরা কঙ্কাল গবেষণা করে জেনেছেন, এই কঙ্কাল একজন নারীর। এই ফসিল কঙ্কালের বয়স প্রায় ৩.২ মিলিয়ন (৩২ লক্ষ) বছর। যখন এই খননকাজ চলছিল, তখন সারা দিন সেই সময়ের জনপ্রিয় গান 'লুসি ইন দ্য স্কাই উইথ ডায়মন্ডস' বাজানো হতো। সেখান থেকেই হোমিনিড নারী কঙ্কালের নাম দেওয়া হলো 'লুসি'।
খুঁজে দেখি মানুষের বিবর্তনের ইতিহাস
খুশি আপা: চলো আমরা খুঁজে দেখি মানুষ কোথা থেকে এলো! শুরু থেকেই মানুষ একই রকম থাকেনি। বিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের বর্তমান রূপে আসা। বিবর্তন হলোই বা কীভাবে?
শিক্ষার্থীরা ৫-৬ জনের দলে মানুষ কোথা থেকে এলো এবং তাদের পরিবর্তনগুলো কীভাবে এলো তা বোঝার জন্য অনুসন্ধান করবে। প্রথমে তারা অনুসন্ধানের পরিকল্পনা করে নিল। কীভাবে তারা তাদের অ্যাসাইনমেন্ট উপস্থাপন করবে আলোচনার মাধ্যমে তা-ও ঠিক করে নিল।
অ্যাসাইনমেন্ট: মানুষ কোথা থেকে এল?
দলের নাম; | ||
দলের সদস্যদের নাম | ||
১ | ২ | ৩ |
৪ | ৫ | ৬ |
১. অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন |
২. মূল বিষয় |
৩. উৎস বা কোথা থেকে উত্তর খুঁজে পাওয়া যাবে |
এই অনুসন্ধানের জন্য ক্লাসের সবাই"বিজ্ঞানের চোখ দিয়ে চারপাশ দেখি' অধ্যায়ে শেখা অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে অ্যাসাইনমেন্ট করার চেষ্টা করল।
খুশি আপা: ছোট্ট বন্ধুরা তোমরা তোমাদের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ্য) বই থেকে দ্বিতীয় অধ্যায়ের মানুষ ও সমাজ কোথা থেকে এলো বের করো এবং বিভিন্ন সময়ের মানুষের ছবি দেখো।
সবাই দলে বসে বই থেকে বিভিন্ন সময়ের মানুষের ছবি দেখতে লাগল এবং সময়ের সঙ্গে মানুষের মূল
বৈশিষ্ট্যগুলো কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করলো।
বাড়িতে তারা বড়দের সহায়তায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে আরও তথ্য ও ছবি জোগাড় করল। এভাবে তারা বিভিন্ন সময়ের মানুষের মূল বৈশিষ্ট্যগুলো অনুসন্ধান করে তাদের একটি ফ্রো ছক তৈরি করে ফেলল।
পরেরদিন ক্লাসে সবার সঙ্গে তাদের তৈরি করা মানুষের বিবর্তনের ফ্লো হক শেয়ার করার জন্য ক্লাসের বিভিন্ন জায়গায় সেগুলো টাঙালো। তারপর একে একে সব দল তাদের অ্যাসাইনমেন্ট উপস্থাপন করল। সবাই সবার কাজ মনোযোগ দিয়ে শুনল।
খুশি আপা এবং ক্লাসের সবাই নিজেদের কাজ এবং পরিকল্পনার প্রশংসা করল। তারপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও যেসব উন্নয়ন দরকার খুশি আপা প্রত্যেক দলকে তার স্পষ্ট নির্দেশনা দিলেন। শিক্ষার্থীরা উন্নয়নের দিকগুলো নিয়ে কাজ করে তাদের অ্যাসাইনমেন্ট চূড়ান্ত করে জমা দিল।
সবার কাজ জমা নেয়া হয়ে গেলে খুশি আপা বললেন, কারো কিছু বলার বা জানার আছে? নন্দিনী হাত তুলে বললো, আমি খুবই অবাক হয়েছি এটা জেনে যে, প্রাচীন কালেও মানুষ পৃথিবীর এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় অভিবাসন করেছে। সহায়ক বইতে মানুষ ও সমাজ কোথা থেকে এলো অংশে এরকম মানচিত্রও আছে যেখানে প্রাচীন মানুষেরা কোথা থেকে কোথায় গেছে তা দেখানো হয়েছে। এই মানচিত্র দেখে আমার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে এরকম মানচিত্র কীভাবে তৈরি করা যায়?
খুশি আপা বললেন, খুব সুন্দর প্রশ্ন করেছো তুমি। তাহলে চলো আগামী কাল এ বিষয়ে কাজ করব।
রাস্তা চেনায় মানচিত্র
ক্লাসের বন্ধু রবি কয়েক দিন আগে একা একটি অচেনা জায়গায় বেড়াতে গিয়ে রাস্তা হারিয়ে ফেলেছিল। মূল রাস্তা কোথায় জিজ্ঞাসা করায়, একজন বলল সোজা উত্তর দিকে যেতে। কিন্তু আকাশে মেঘ, বৃষ্টি হবে হবে অবস্থা, রবি দিক ঠিক করতে পারছে না। উত্তর দিক ভেবে চলতে চলতে দেখে সে চলে এসেছে একটা নদীর ধারে তারপর অনেক কষ্টে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসা করে অবশেষে সে সঠিক রাস্তা খুঁজে পায়।
ক্লাসে ফিরে রবি এসব কথা সবাইকে বলতেই, খুশি আপা বললেন, আচ্ছা বলতো রবির কাছে কোন জিনিসটি থাকলে সে খুব সহজেই পথ চিনে বাড়ি চলে আসতে পারতো?
সাকিব: রবির কাছে যদি ঐ এলাকার পথের একটা মানচিত্র থাকত তাহলে ও বুঝতে পারত কোন পথটা কোন দিকে গেছে।
মিলি: আমার বাবা যখন কোথাও অচেনা জায়গায় যান তখন তিনি তার মোবাইল ফোনে গুগল ম্যাপ দেখে দেখে রাস্তা চেনেন।
খুশি আপা: বাহ্ তোমরা তো অনেক কিছু জানো দেখছি। আচ্ছা, রবির কাছে যদি মানচিত্র না থেকে ওখানকার একটা ছবি থাকত, তাহলে ও কি পথ চিনতে পারত?
শিহাব: না আপা ছবি দেখে তো বোঝা যায় না কোন দিকে যেতে হবে!
খুশি আপা: ও আচ্ছা তাহলে তো মানচিত্রে অনেক কিছু থাকে। আচ্ছা চলো তাহলে কিছু ছবি দেখি-
প্রশ্নঃ
ওরা তখন দলে ভাগ হয়ে প্রশ্নের উত্তরগুলো খুঁজতে চেষ্টা করল-
১ম ছবির উপাদান | ২য় ছবির উপাদান |
---|---|
হাতে আঁকা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য | বাংলাদেশের মানচিত্র |
গাছপালা, নদী...... | স্কেল, নিক....... |
চলো ওদের মতো করে আমরাও ছবি দুটির উপাদানগুলো খুঁজে বের করি
মানচিত্র স্কেল
সানি: আপা, ছবির সঙ্গে মানচিত্রের পার্থক্য খুঁজতে গিয়ে পেলাম মানচিত্রে স্কেল লাগে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, স্কেল কেন লাগবে? আমরা ইচ্ছেমতো মাপে কেন তা আঁকতে পারব না।
খুশি আপা: চলো তাহলে আমরা একটা গল্প পড়ে আসি। খুঁজে দেখি গল্পে রাজা কী সমস্যায় পড়েছে?
অনেক আগে এক ঘোড়াপ্রেমী রাজকন্যা ছিল। রাজা ঠিক করলেন, তার একমাত্র কন্যার জন্মদিনে তাকে একটা সুন্দর ঘোড়া উপহার নিয়ে চমক দেবেন। রাজা ঘোড়া কিনে আনার জন্য লোক পাঠালেন। লোকটি ঘোড়া আনলে রাজা সেটা জন্মদিন পর্যন্ত লুকিয়ে রাখতে বললেন। কিন্তু ঘোড়া রাখার জন্য তো একটা আস্তাবল চাই, ভাই রাজা ঠিক করলেন তিনি নিজেই মাপ নিয়ে ছুতার ডেকে আস্তাবল বানাবেন যাতে বেশি জানাজানি না হয়।
রাজা আড়াআড়ি আর লম্বালম্বি হেঁটে দেখলেন লম্বায় ২০ পা, পাশে ১০ পা হলে ঘোড়াটার জন্য উপযুক্ত আস্তাবল হবে। তখন তিনি ছুতারকে ডেকে আস্তাবল বানাতে বললেন যেটি ২০ ধাপ লখা এবং ১০ ধাপ চওড়া।
জন্মদিনে রাজকন্যা ঘোড়া উপহার পেয়ে বেজায় খুশি। যখন সে ঘোড়া রাখতে আস্তাবলে গেল তখন দেখে, ওমা, একি! আস্তাবল তো খুব ছোট! রাজা
বিরক্ত হয়ে ছুতারকে ডেকে পাঠালেন, জিজ্ঞেস করলেন এমন হলো কেন? ছুতার কিছুই বুঝতে পারছে না, সে বলল রাজা মশাই আমি ঠিক ২০ পা লম্বা ও ১০ পা চওড়া আস্তাবলই বানিয়েছি। রাজা তখন ছুতারের পায়ের দিকে তাকিয়ে বিষয়টা বুঝতে পারলেন। রাজার পায়ের তুলনায় ছুতারের পা খুব ছোট, মানুষও খাট। আর তাই ছুতারের পায়ের মাপে বানানো আস্তাবল ছোট হয়ে গেছে।
সানি বলল এখন বুঝেছি আপা যদি আমি একটা নির্দিষ্ট মাপ না বলে দিই তাহলে সঠিকভাবে সেটার পরিমাপ বোঝা যাবে না। ফাতেমা বলল হ্যাঁ যেমন সানি যদি বলে এর বাড়ি স্কুল থেকে ৫০ পা দূরে, তাহলে আমরা কেউ ই বুঝতে পারব না ৫০ পা কি উত্তরে না দক্ষিণে নাকি অন্য কোনো দিকে। সাকিব বলল, আর ওর পা তো আমার থেকে ছোটো। সবাই হেসে উঠল সাকিবের কথা শুনে খুশি আপা বললেন, একদম ঠিক বলেছ তোমরা। এ জন্য মানচিত্রে অনেক জরুরি জিনিস থাকে যা তোমরা আগে বের করেছ। রিমি বলল মানচিত্রের নিচে যে স্কেল আছে ওটা কেন প্রয়োজন আপা? খুশি আপা বললেন, চলো আমরা তোমার এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য আমাদের শ্রেণিকক্ষটা মেপে দেখি।
তখন ওরা সবাই দুই দলে ভাগ হয়ে একদল শ্রেণিকক্ষের দৈর্ঘ্য এবং অন্যদল শ্রেণিকক্ষের প্রস্থ স্কেল দিয়ে মেপে নিয়ে এল।
খুশি আপা: চলো এখন সবাই দলে বসে শ্রেণিকক্ষটি খাতায় আঁকি। রবি: কিন্তু শ্রেণিকক্ষ তো অনেক বড়, এটা কীভাবে মাপ ঠিক রেখে খাতায় আঁকব? নাজিফা তাই তো। তাহলে কী করা যায়?
রিমি আমরা যদি এটিকে একটু ছোটো কল্পনা করে নিই, তাহলে?
শফিক: তাহলে সেই রাজার আস্তাবলের মতো হবে এক এক জনের এক এক কল্পনা!
সাকিব: তাহলে আমরা যদি কল্পনা না করে ধরে নিই, খাতার ১ সেন্টিমিটারের সমান আমাদের কক্ষের ১০০ মিটার! তাহলে?
খুশি আপা ঠিক তাই। কোনো স্থানের মানচিত্র আঁকার সময় নির্দিষ্ট মাপে ছোট করে আঁকা যায়, তখন শুধু মানচিত্রে স্কেল আকারে পরিমাপটা লিখে দিতে হয়। চলো, আমরা সেভাবেই আমাদের শ্রেণিকক্ষ দলে ভাগ হয়ে খাতায় এঁকে ফেলি।
এখন ওরা দলে ভাগ হয়ে খাতায় শ্রেণিকক্ষের একটি মানচিত্র তৈরি করল।
বাড়ির কাজ সবাই ঠিক করল, তারা সবাই বাড়ি থেকে নিজেদের স্কুলের পথের মানচিত্র এঁকে নিয়ে আসবে। শিমুল বলল তাহলে আমাদের বাড়ি থেকে স্কুল যদি ৭ কিলোমিটার হয় তাহলে আমি যে মানচিত্র আঁকব তার স্কেল আমি ১ সে.মি. = ১ কিলোমিটার ধরব। খুশি আপা বললেন, বেশ বেশ তাহলে আমরা এভাবে সবার বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথের মানচিত্র এঁকে নিয়ে আসব। |
চলো আমরাও ওদের মতো করে আমাদের বাড়ি থেকে স্কুলে আসার পথের মানচিত্র এঁকে ফেলি।
বৃহৎ ও ক্ষুদ্র স্কেলের মানচিত্র
খুশি আপা বললেন, তোমরা সবাই খুব সুন্দরভাবে মানচিত্র তৈরি করতে পেরেছ। এখন চলো আমরা একটা মজার কাজ করি। তোমরা তোমাদের বইয়ে দুটো মানচিত্র দেখতে পাচ্ছ।
রবি বলল হ্যাঁ আপা একটা বাংলাদেশের মানচিত্র আর একটি চট্টগ্রাম বিভাগের মানচিত্র। খুশি আপা বললেন, ঠিক তাই। চলো এখন আমরা দলে ভাগ হয়ে প্রত্যেকে চট্টগ্রামের প্রধান প্রধান ভূমিরূপগুলো কোথায় কোথায় আছে তা খুঁজে বের করি ও তা খাতায় লিখে ফেলি।
ওরা দলে ভাগ হয়ে কাজটি করা শুরু করল।
কাজটি শেষ হওয়ার পর ওরা যা যা খুঁজে পেয়েছে তা সবার সামনে সব দল একে একে উপস্থাপন করল। খুশি আপা বললেন, আচ্ছা, এখন বলো কোন মানচিত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ভূমিরূপ খোঁজার কাজটি সহজভাবে করতে পেরেছ? মিলি বলল, আপা যখন বাংলাদেশের মানচিত্র নিয়ে চট্টগ্রাম বিভাগের ভূমিরূপ খোঁজার কাজ করেছি, তখন আমাদের ভূমিরূপগুলো কোথায় কোথায় আছে তা ভালোভাবে বুঝতেই পারছিলাম না। মনে হচ্ছে সব এক জায়গায় হয়ে গেছে।
সাকিব বলল হ্যাঁ আর যখন আমরা চট্টগ্রাম বিভাগের মানচিত্র নিয়ে কাজটি করলাম, তখন অনেক সহজেই তা খুঁজে পেয়েছি। খুশি আপা বললেন, ঠিক তাই। এ জন্য যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে ভালোভাবে দেখতে হয় তখন তাকে একটু বড় করে নিলে কাজটি অনেক সহজ হয়, তাই না? আদনান বলল, যেমন আমরা ছবি বা মোবাইলে লেখা ছোট থাকলে তাকে জুম করে দেখি তাই না আপা? খুশি আপা বললেন তুমি একদম ঠিক বলেছ রনি। এভাবেই আমরা আমাদের প্রয়োজনে মানচিত্রকে ছোট বা বড় করে দেখি। মিলি বলল কী মজা আমরা মানচিত্রকেও জুম করতে পারি। সবাই ওর কথা শুনে হেসে উঠল। গণেশ বলল, কিন্তু আপা আমরা মানচিত্র কীভাবে ব্যবহার করতে পারি? খুশি আপা বললেন, ভালো প্রশ্ন করেছ। আমরা একটা মজার খেলার মাধ্যমে এটা বোঝার চেষ্টা করবো।
খুশি আপা বললেন, আমরা আগামীকাল একটা গুপ্তধন খোঁজার খেলা খেলব। সবাই আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠল।
গুপ্তধনের মানচিত্র
পরের দিন ক্লাসে সবাই খুব উত্তেজিত। সাকিব তো রীতিমতো গোয়েন্দা সেজে এসেছে। খুশি আপা ক্লাসে আসতেই মিলি বলল আপা আমরা আজ সবাই গোয়েন্দা। খুশি আপা বললেন, হ্যাঁ তাই তো। আজ আমরা যে গুপ্তধন খোঁজার খেলা খেলব তার জন্য কী কী লাগতে পারে? রনি বলল, সবার আগে লাগবে গুপ্তধন। রুপা বলল, আর অবশ্যই গুপ্তধন যেখানে থাকবে তার একটা মানচিত্র। সাকিব বলল, আর একটা মেধাবী গোয়েন্দা দল সবাই ওর কথা শুনে হেসে উঠল। খুশি আপা বললেন, আচ্ছা এবারে আমরা আমাদের খেলার নিয়ম সবাই ভালোভাবে শুনে নিই।
১ম ধাপে আমরা চারটা দলে ভাগ হয়ে যাব, আমাদের স্কুলকে চারটি ভাগে করে তার মানচিত্র আঁকব। যেমন একদল শ্রেণিকক্ষ থেকে স্কুলের খেলার মাঠ পর্যন্ত নেবে, ২য় দল মাঠ থেকে লাইব্রেরি পর্যন্ত তার সীমানা ঠিক করবে। এভাবে চারটি পৃথক মানচিত্র আমরা প্রথমে দলে বসে এঁকে নেব।
২য় ধাপে আমি তোমাদের প্রতিটি দলের মানচিত্রে একটা x চিহ্ন দেব যেখানে আমি গুপ্তধন লুকিয়ে রাখব।
৩য় ধাপে তোমরা প্রতিটি দল তাদের মানচিত্রটি অন্য দলের সঙ্গে বদলে নেবে।
৪র্থ ধাপে প্রত্যেক দল যে মানচিত্রটি পেয়েছ সেটি অনুসরণ করে গুপ্তধন খুঁজে বের করবে। যে দল সবার আগে গুপ্তধন খুঁজে বের করে আনবে সে দল বিজয়ী। সবাই বলল তারা বুঝতে পেরেছে। তারপর সবাই গুপ্তধন খোঁজার কাজে লেগে পড়ল।
মহাদেশ, মহাসাগর, এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া
আজ খুশি আপা ক্লাসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে নীলা বলে উঠল, আপা, আমাদের ক্লাসে একজন নতুন বন্ধু এসেছে। ওর নাম জাহাঙ্গীর। খুশি আপা বললেন, তাই নাকি। ও আচ্ছা খুব সুন্দর নাম কনক, তোমরা আগে কোথায় ছিলে? জাহাঙ্গীর বলল আমরা আগে সিলেটে ছিলাম আপা। আমার বাবার চাকরিতে বদলির কারণে আমরা এখানে এসেছি। খুশি আপা তখন সবার উদ্দেশ্যে বললেন, দেখ কনক ওর বাবার চাকরির সুবাদে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় এসেছে। এরকম আর কোন কোন কারণে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পারে বলো তো?
খুশি আপা বলল, তোমরা তো প্রাচীন মানুষ সম্পর্কে জেনেছ তারাও নিজেদের বিভিন্ন প্রয়োজনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়েছে। এখন সবাই মিলে ঠিক করল প্রাচীন মানুষ প্রথমে কোথায় ছিল তারপর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় কোথায় গেল তা তারা অনুসন্ধান করে বের করবে। তখন তারা অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ অনুসরণ করে প্রথমে প্রশ্ন বানাল, যা তারা খুজেঁ বের করতে চায়।
চলো আমরাও ওদের মতো করে প্রশ্ন বানাই
তখন খুশি আপা তাদের বললেন, তোমরা এই যে প্রশ্নগুলো বের করেছ এর উত্তর কোন জায়গা থেকে পেতে পারো?
রবিন বলল, আপা আমরা কয়েকদিন আগে 'মানুষ কোথা থেকে এলো' নিয়ে কাজ করেছিলাম, ওখানে এরকম কিছু তথ্য দেখেছি।
তখন তারা ৫-৬ জনের ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার ধাপ অনুসরণ করে প্রশ্ন দুটির উত্তর অনুসন্ধান করে লিখলো ।
খুশি আপা তখন বললেন, এর আগে তো তোমরা নানাভাবে তথ্য উপস্থাপন করেছ। আজ চলো আমরা নতুন একটি উপায়ে তথ্যগুলো উপস্থাপন করি।
শিমুল বলল, আপা যেহেতু সব উত্তরগুলোই এক একটি স্থানের নাম, তাহলে তো আমরা এটা মানচিত্রেও দেখাতে পারি।
খুশি আপা বললেন, শিমুল তুমি ঠিক বলেছ। চলো তাহলে আমরা কাজটি শুরু করি।
চলো আমরাও ওদের মতো করে মানচিত্রে বিভিন্ন রঙের সাহায্যে কাজটি করি।
পারিবারিক পরিভ্রমণ মানচিত্র
মিলি আজ ভীষন খুশি খুশি মুখ নিয়ে ক্লাসে ঢুকল। ওকে দেখে রবিন বলল, কী রে তোকে আজ এত খুশি খুশি দেখাচ্ছে কেন? আয়েশা বলল, কারণ আমরা বেড়াতে গিয়েছিলাম। রবিন জিজ্ঞাসা করল, তা কোথায় বেড়াতে গিয়েছিলি?
আয়েশা বলল, কক্সবাজারে, কারণ আমার সাগর খুব ভালো লাগে। রবিন বলল তাই? কিন্তু আমার বেশি ভালো লাগে পাহাড়। এমন সময় খুশি আপা ক্লাসে ঢোকার সময় ওদের কথা শুনে বললেন, আমার কিন্তু সাগর, পাহাড়ের সঙ্গে বনও খুব ভালো লাগে। সঙ্গে সঙ্গে অমিত বলল, আপা আমি সুন্দরবন দেখেছি, ওটা খুলনা বিভাগে। আনুচিং বলল, আপা আমার দাদু আগে থাকত বান্দরবানে। আমার ওখানকার পাহাড়, বন, ঝরনা সবকিছু খুব ভালো লাগে।
খুশি আপা তখন বললেন, আমরা তো প্রাচীন মানুষ কোথায় ছিল, কোথায় কোথায় গেছে সে বিষয়ে জানলাম । এখন চলো, আমরা নিজেদের নিয়ে এমন একটি কাজ করি।
সালমা বলল, কিন্তু আপা আমি তো জানি না এর আগে আমরা কোথায় ছিলাম। আপা বলল, ঠিক বলেছ।
তোমরাই বলো, এ কাজে তোমরা কাদের কাছ থেকে সাহায্য নেবে? সবাই বলল, বাড়ির বড়দের। রফিক বলল, আপা আমরা কোথায় কোথায় যেতে ভালোবাসি, সেটাও কি এখানে আনতে পারব? আপা বললেন, নিশ্চয়। তোমরা এ কাজটি তোমাদের বইয়ে যে বাংলাদেশের মানচিত্রটি আছে সেখানে করবে। আমরা এ কাজটির কী নাম দিতে পারি? গণেশ বলল, এটি যেহেতু আমাদের প্রত্যেকের পরিবার নিয়ে করতে হবে, তাই এর নাম হোক পারিবারিক পরিভ্রমণ মানচিত্র। সবাই গণেশের মতকে সমর্থন করল।
তখন তারা প্রত্যেকে তাদের নিজ নিজ পারিবারিক পরিভ্রমণ মানচিত্র তৈরি করল।
চলো, ওদের মতো করে আমরাও একটি পারিবারিক পরিভ্রমণ মানচিত্র বানাই।
খুশি আপা আজ ক্লাসে সবার পারিবারিক পরিভ্রমণ মানচিত্র দেখে ভীষণ খুশি হলেন এবং তাদের অভিনন্দন জানালেন। তারপর তাদের বললেন, তোমরা তো এখন জানো যে একজন মানুষের একটি মাত্র পরিচয় থাকে না। প্রত্যেকেরই অনেকগুলো পরিচয় তৈরি হয়। নিজেনের পরিচয়েরও বৈচিত্র্য তোমরা জেনেছ। বঙ্গবন্ধু, বেমগ রোকেয়ার মতো মনীষীদের যে বহু বিচিত্র পরিচয় থাকে, তা-ও জেনেছ। তোমরা এতসব কাজের মাধ্যমে আরও যে পরিচয় সম্পর্কে জানলে তাকে বলে ভৌগোলিক পরিচয়। আপা বোর্ডে ভৌগোলিক পরিচয় কথাটি লিখলেন। মলি বলল, আপা আমরা তো বাংলাদেশের মানচিত্রে কাজটি করেছি, কিন্তু আমরা তো এশিয়া মহাদেশেও বাস করি। খুশি আপা বললেন, তুমি ঠিক বলেছ, চলো আমরা আরেকটি কাজ করি যেখানে তুমি কোন মহাদেশে আছ সেটিও থাকবে।
ওরা তখন বৃত্ত আকারের ছয়টি ছক পেপার নিল। সবচেয়ে বড় বৃত্তে নিজের মহাদেশ এবং ক্রমান্বয়ে নিজের দেশ, বিভাগ, জেলা, এলাকা ও সবচেয়ে ছোট ছক পেপারে নিজের বাড়ির চিহ্ন দেবে।
চলো আমরাও ওদের মতো করে কাজটি করি।
আজ ক্লাসে সবাই খুব খুশি কারণ, খুশি আপা বলেছেন, আজ ক্লাসে মিউজিক্যাল চেয়ার খেলা হবে। আপা ক্লাসে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে সবাই একসঙ্গে হইহই করে উঠল।
খুশি আপা: আরে থামো থামো। তোমরা তো আগেই দেখেছ নিয়ম মেনে কোনো খেলা খেললে তা আরও সুন্দর হয় তাই না? তাহলে চলো, আমরা আজকের খেলার কিছু নিয়ম জেনে নিই।
আনুচিং হাত তুলল, তখন খুশি আপা তার কাছে জানতে চাইলেন, আনুচিং তুমি কি কিছু বলতে চাও? আনুচিং বলল, আপা আমরা তো নিউজিক্যাল চেয়ার খেলার নিয়ম জানি। খুশি আপা বললেন, হ্যাঁ তবে আজকের খেলাটা একটু অন্যরকম। রবিন বলল, কিরকম আপা? খুশি আপা তখন বললেন, আজ আমরা
মিউজিক্যাল চেয়ার খেলার নিয়ম মেনেই 'পাস দ্য গ্লোব খেলব। মোজাম্মেল উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞাসা করল। সেটি কেমন আপা?
খুশি আপা তখন বললেন, আমরা প্রথমে গোল হয়ে বসব। একজন হাতে একটি গ্লোব নেব তারপর মিউজিক শুরু হবে। আমরা গ্লোবটি দুই হাতে ধরে পাশের জনকে দেব। এরপর যখন মিউজিক বন্ধ হবে, তখন গ্লোবটি যার হাতে থাকবে সে ডান হাতের বুড়ো আঙুলের জায়গাটি চিহ্নিত করবে এবং সেটির নাম ও কোন মহাদেশে অবস্থিত তা বলবে। সেই মহাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য লিখবে। এরপর সে খেলা থেকে সরে যাবে। তারপর মিউজিক চালু হলে খেলাটি আবার শুরু হবে। একটা কথা সবাই মনে রাখব, একটি জায়গা শুধু একবারই আমরা নেব, পুনরায় যদি ওই জায়গা আসে, তবে আবার মিউজিক শুরু হবে অর্থাৎ খেলা আবার শুরু হবে।
খুশি আপা তখন বললেন, এবার খেয়াল করে দেখ, তুমি থাক নির্দিষ্ট একটা বাড়িতে- একটা রাস্তা বা গলির পাশে ছোট্ট একটি ঘরে বা উঁচু বাড়ির ফ্ল্যাটে। কিন্তু সেই তোমার যোগ ঘটে যায় গোটা পৃথিবীর সঙ্গে। ব্যাপারটা যেমন মজার, তেমনি গর্বেরও- তাই না।
ভাষা
খুশি আপা বললেন, আজ আমরা ভাষা নিয়ে কুইজ খেলব। দেখি কে সবচেয়ে বেশি সঠিক উত্তর দিতে পারে। ক্লাসের সবাই খুশিতে চিৎকার দিয়ে উঠল, সবাই খুব আগ্রহ নিয়ে কুইজের প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল।
খুশি আপা: কুইজের কিছু নিয়ম আছে। চলো আগে নিয়মগুলো বুঝে নিই।
১. প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য হাত উঠাতে হবে। যে আগে হাত উঠাবে সে আগে উত্তর দেয়ার সুযোগ পাবে।
২. প্রথম উত্তরদাতার উত্তর সঠিক না হলে, দ্বিতীয়জন উত্তর দেবে। এভাবে সঠিক উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত আমরা উত্তর শুনে যাব।
৩. কেউ যদি হাত না তুলে বা সুযোগ পাওয়ার আগেই উত্তর বলে বা কথা বলে, তাহলে তার মাইনাস মার্কিং হবে।
৪. যে বা যারা সবচেয়ে বেশি সঠিক উত্তর দেবে, সে বা তারা আজকের কুইজের বিজয়ী হবে।
সবাই বুঝতে পেরেছ?
ক্লাসের সবাই একসঙ্গে বলল তারা বুঝতে পেরেছে।
খুশি আপা: হতভাগা ছেলে! তোকে কখন থেকে বলছি- গরুটা দুইয়ে দিয়ে বাজারে যা। তা ছেলের কথা
শোনো, বলে কি না, শীত করছে। ঘাড়টা ধরে নিয়ে আসব। খুশি আপা: এই কথাটা আমি বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায় একবার করে বলব। তারপর জানতে চাইব এটা কোন অঞ্চলের ভাষা? তোমরা যে মনে করো উত্তর জানো, সে হাত উঠাবে। আমি বললে, উত্তর দেবে। চলো শু করি।
খুশি আপা: "পুরা কপাইল্লা পুতাইন রে! তরে বুন বিয়ান কৈচি- গাইভারে ক্ষীরাইয়া বাজার যা। তা পুভাইন কা, পারতাম না, ডাইয়া ধরচে। বাচ্ছা ধইরা লৈয়া আইবাম।' বলো কোন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা এটা?
সবার আগে দীপা হাত তুলল।
খুশি আপা: দীপা বলো।
দীপা: এটা ময়মনসিংহ অঞ্চলের ভাষা।
খুশি আপা: হ্যাঁ উত্তর ঠিক হয়েছে। দীপা পাচ্ছে ৫ নম্বর।
খুশি আপা: 'ছাইক কপাইলা পোলারে। কি আর কমু? কোন হাত হকালে কইচি গরুডারে পানাইয়া বাজারে যা। এমুন পোলার পোলা। তানি কথা হোনে? কয়, হীতে খরচে। ন্যাক, ঘাড় ভা ধইরা লৈয়া আমু।' বলো কোন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা এটা?
হাত তুলেছে দীপঙ্কর, নিসর্গ ও সুমি। আগে হাত তোলায় খুশি আপা দীপঙ্করকে সুযোগ দিলেন।
হারুন এটা রংপুরের ভাষা।
খুশি আপা: উত্তর সঠিক হয়নি। এরপর হাত তুলেছে নিসর্গ। নিসর্গ বলো।
নিসর্গ: এটা ঢাকার ভাষা। খুশি আপা: সঠিক উত্তর; আর এ জন্য নিসর্গ পাচ্ছে ৫ নম্বর
খুশি আপা: ‘অতভইগ্যা ফোআরে হইলাম যে, পড়ুয়া দুইয়ারে বাজারত যা। কোয়া তো হথা উইনতো না, হলদে আতার বর্ণণীত গরের। তার গদ্দানত ধরি লৈ আই।'- বলো দেখি এটি কোন অঞ্চলের আঞ্চলিক ভাষা?
হাত তুলেছে রহিমা ও আনুচিং। আগে হাত তোলায় রহিমা আগে বলার সুযোগ পেল।
রহিমা: এটা চট্টগ্রামের ভাষা।
খুশি আপা: একদম ঠিক। রহিমা পাচ্ছে ৫ নম্বর।
খুশি আপা: 'পোরাকপাল্যা ছাওয়াল। তো যে বিজ্ঞানে কচিলাম পঙ্গুতা দোয়ায়া বাজারে যা। তা কুয়ার কারা শুনবি ক্যা? কতিচে শীত ধরিছে। যার ধয়া নিয়া আসফো নে।'- এবার এটা বলো।
দীপা আর প্রকৃতি হাত তুলেছে। অন্যরাও বলতে চায় কিন্তু নিজে থেকে উত্তর বললে তো মাইনাস মার্কিং হবে।
তাই সবাই সুযোগের অপেক্ষা করে। এবার সবার আগে হাত তুলে দীপা সুযোগ পেয়েছে। দীপা: আপা, এটি পাবনা অঞ্চলের ভাষা। আমার এক আন্টির বাড়ি পাবনা, তাকে আমি এভাবে কথা বলতে শুনেছি।
খুশি আপা: হ্যাঁ, তুমি ঠিক বলেছ দীপা। তুমি পেয়ে গেলে আরও ৫ নম্বর, তাতে তোমার মোট স্কোর হলো ১০
খুশি আপা: আজকের কুইজের শেষ প্রশ্ন এবার। 'হতোভাগা হল। তোরে কহনে আমি কলাম, গোড্ডো দুইয়ে দিয়ে বাজারে যা। তা হল আমার কথাডা নাহি শুনলো? কষ্টে কিনা তার শীত করতিছে। যেটা ধইরে নিয়ে আসবো।'- এটি কোন অঞ্চলের ভাষা বলো দেখি?
হাত তুললো আনুচিং, রাজীব ও সুমি। আনুচিং: আমার মনে হয়, এটি রাজশাহীর ভাষা।
খুশি আপা: না আরেকটু ভাবতে হবে, আনুচিং। এবার চলো আমরা রাজীবের কাছে শুনি।
রাজীব; আপা, এটা খুলনা অঞ্চলের ভাষা। খুশি আপা: উত্তর সঠিক হয়েছে। রাজীব পেয়ে যাচ্ছে ৫ নম্বর।
খুশি আপা: তোমরা সবাই অনেক ভালো করেছ। তবে তোমাদের কি মনে হয়, কে বেশি ভালো করেছে? সবাই বলল, দীপা। কারণ, দীপা দু'টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে ১০ নম্বর পেয়েছে।
সবাই দীপার জন্য হাততালি দিয়ে ওকে শুভেচ্ছা জানাল।
খুশি আপা খেলাটা তোমাদের কেমন লাগল?
নাজিফা খুব ভালো লেগেছে। আমরা আজ অনেক অঞ্চলের ভাষা সম্পর্কে জানলাম ।
আনুচিং: এই ভাষা আমাদের পরিচয়ের একটি উপাদান। ভাষা শুনে আমরা বুঝি সে কোন অঞ্চলের অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষের পরিচয়ে তার ভাষাও গুরুত্বপূর্ণ।
খুশি আপা আমিও তোমাদের সাথে একমত। আমরা যদি আরও দূরে যাই মানে দেশের বাইরের কথা ভাবি তাহলে দেখতে পাবো একেক দেশের মানুষ একেক ভাষায় কথা বলে।
দীপা: জি আপা, আমি একবার বাবা-মায়ের সাথে উত্তর ভারতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন দেখেছি ওখানকার মানুষ হিন্দিতে কথা বলে। রাজীব আমার বাবা একবার অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন কনফারেন্সে। আমি বাবার কাছে শুনেছি, ওখানকার মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে। খুশি আপা: হ্যাঁ, তোমরা ঠিক বলছ। আজ তাহলে তোমরা কী শিখলে?
দীপা: আমরা দেখতে পাচ্ছি, বসবাসের দেশ, জাতীয়তা ও নাগরিকত্বের সঙ্গে ভাষার খুব গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে।
খুশি আপা খুব সুন্দর বলেছ। চলো এবার, সবাই বইয়ের ৩২ পৃষ্ঠা বের করি। তোমরা সবাই কি 'ভাষা মানচিত্র দেখতে পাচ্ছ? সবাই বই খুলে ভাষা মানচিত্র দেখতে লাগল।
খুশি আপা: তোমাদের সবার কাজ হচ্ছে আগামী ক্লাসে এই মানচিত্র দেখে তোমাদের কার কী মনে হচ্ছে তা লিখে নিয়ে আসবে। এটা তোমাদের জন্য একটি ছোট্ট অ্যাসাইনমেন্ট।
ক্লাসের সবাই পরবর্তী ক্লাসের জন্য তাদের কাজ বুঝে নিল।
ছক: নমুনা অ্যাসাইনমেন্ট ছক
বিষয়: ভাষা মানচিত্র | |
---|---|
১. কী? | |
২. কেন ? | |
৩. মূল বিষয় কী? | |
৪. অন্যান্য পর্যবেক্ষণ |
বিজ্ঞানের চোখে চারপাশ দেখি' পাঠে শেখা ধাপ অনুসরণ করে ক্লাসের সবাই তাদের কাজ/ অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করল।
ভাষা মানচিত্রের দলীয় উপস্থাপন
ক্লাসের সবাই বলল, চলো আমরা সবাই ভাষা মানচিত্র নিয়ে যা যা করলাম এবং যা যা পেলাম সেগুলো উপস্থাপন করি। উপস্থাপনাটি আমরা নানা উপায়ে করতে পারি। কেউ পোস্টার পেপারে, কেউ পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইড ব্যবহার করে, কেউ কাগজে লিখে কাজ উপস্থাপন করল। সবাই সবার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনল। এবং মতামত দিল।
সময়ের সঙ্গে ভাষার পরিবর্তন
খুশি আপা: সবাই তোমাদের পরিশিষ্ট থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনারতরী কবিতাটি বের করে দেখ। পড়া হলে, চলো এবার নিচে সোনারতরী কবিতাটির দু'টি লাইন বিভিন্ন সময়ে লেখা হলে, তার ভাষা কেমন হতো তা দেখি। সবাই আগ্রহ নিয়ে বই খুলে বের করে পড়তে লাগলো।
মূল পঙক্তি- সোনারতরী', ফাল্গুন, ১২৯৮ সালে লেখা - আধুনিক বাংলা (১৮৯২-সম্প্রতিকাল)
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
গান গেয়ে নাও বেয়ে কে আসে - আশে) পারে,
দেখে যেন (=জ্যানো) মনে হয়, চিনি ওকে (= ওকে)।।
মধ্যযুগের বাংলা আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দে)
গান গায়্যা (গাইহ্যা) নাও বায়্যা (বাইয়া) কে আশ্যে (আইশে) পারে।
দেখ্যা (দেইখ্যা) জেন অ (জেন্ছ, জেহেন) মনে হোত্র, চিনি
(চিন্ হীয়ে) ওআরে (ওহারে, ওহাকে) ।
প্রাচীন বাংলা (আনুমানিক ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে)
গান গাহিঙ্গা নার বাহিআ কে আইশই। আরিশই) পারছি (পালছি)-
দেখিত জৈণ মণে (মাহি) হোই চিন্ হিতই ওছারহি (ওয়ার্কাহ)।
[সূত্র: বাঙ্গলা ভাষা প্রসঙ্গে শ্রী সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়]
খুশি আপা: আচ্ছা রবীন্দ্রনাথের এই গানের কলি পড়ে তোমাদের কী মনে হচ্ছে? নাজিফা আমার মনে হয়, সময়ের সাথে সাথে ভাষা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। রাজীব কিন্তু এই ভাষার পরিবর্তন কোথা থেকে, কীভাবে হলো? আমার সে বিষয়ে জানতে ইচ্ছে হচ্ছে। খুশি আপা: চলো, আমরা খুঁজে দেখি নিজের ভাষাটা কীভাবে হলো?" এবং "ভাষা কেন গুরুত্বপূর্ণ?"
ক্লাসের সবাই আগে শেখা অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে নিজের ভাষা কীভাবে হলো এবং ভাষা কেন পুরুত্বপূর্ণ তা খুঁজে দেখতে প্রথমে দলে বসে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে নিল।
নমুনা প্রশ্নমালা: |
---|
নিজের ভাষাটা কীভাবে হলো? |
ভাষা কেন গুরুত্বপূর্ণ? |
ভাষা কি সবসময় একই রকম থাকে? |
ভাষা কীভাবে পরিবর্তন হয়? |
ভাষা কেন পরিবর্তন হয়? |
ভাষার সাথে আমাদের জীবনযাপনের কোনো বিষয়ের কি মিল আছে? |
ভাষা কি আমাদের জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন? |
তারপর ক্লাসের সবাই ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) এবং অন্যান্য উৎস যেমন, ইন্টারনেট, অন্যান্য ক্লাসের বই, বড়দের সঙ্গে কথা বলা ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে অ্যাসাইনমেন্ট করল এবং ক্লাসে উপস্থাপন করল।
খুশি আপা: আমরা সবাই আজ একটা মজার কাজ করব। তোমরা তোমাদের ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বই বের করো ।
ক্লাসের সবাই ৫/৬ জনের দলে ভাগ হয়ে রিসোর্স বইয়ের প্রথম অধ্যায় থেকে চতুর্থ অধ্যায় পর্যন্ত পড়বে।
খুশি আপা: তোমরা কেউ কি বলতে পারো সংস্কৃতি শব্দটি দিয়ে আমরা কী বুঝি?
রাজীব; জি আপা, আমরা সংস্কৃতি নিয়ে আগের ক্লাসে জেনেছি। যেভাবে জীবন যাপন করি সেটাই আমাদের সংস্কৃতি।
অন্বেষা: আমাদের ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, খাদ্যাভ্যাস, বিশ্বাস, রীতিনীতি, মূল্যবোধ, আচার অনুষ্ঠান এসব মিলেই আমাদের সংস্কৃতি।
খুশি আপা: তোমরা খুব সুন্দর বলেছ। তোমরা কি জানো আমাদের জীবনযাপন প্রণালি অর্থাৎ আমাদের সংস্কৃতি সব সময় এক রকম ছিল না। সময়ের সঙ্গে এগুলোর পরিবর্তন হয়েছে।
খুশি আপা: চলো এখন আমরা সবাই বই, ইন্টারনেট ও বিভন্ন উৎস থেকে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সময়ের সঙ্গে
আমাদের সংস্কৃতি কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে এবং হচ্ছে তা বোঝার চেষ্টা করি।
খুশি আপা সবাইকে একটি নমুনা ছক দেখালেন এবং নিজের নিজের খাতায় নিজের মতো করে ছকটি পুরণের চেষ্টা করতে বললেন। খুশি আপা আরও বললেন, তারা চাইলে আরও নতুন নতুন বিষয় ছকে যোগ করতে পারে।
ছক: সংস্কৃতির পরিবর্তন
উপাদান | আগে থেকে ব্যবহার করি | কোন কোন উপাদান নতুন করে যুক্ত হয়েছে |
---|---|---|
খাদ্য | ||
বস্র | ||
বাসস্থান | ||
পেশা | ||
যানবাহন | ||
বিনোদন | ||
আচার-অনুষ্ঠান |
নিসর্গ: আচ্ছা, তাহলে আমরা সবাই খুঁজে বের করব সংস্কৃতির কোন কোন উপাদান প্রাচীনকালের ধারাবাহিকতায় এখনো একই রকম আছে, তাই তো?
খুশি আপা ঠিক তাই।
খাদিজা আমরা আরও দেখব কোন কোন উপাদান নতুন করে যুক্ত হয়েছে?
খুশি আপা: হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছ। চলো এবার আমরা কাজ শুরু করি। সবাই প্রাথমিক প্রচেষ্টায় যা করেছে সেটা উপস্থাপন করলো, তারপরভিত্তিতে পাঠ্যপুস্তকসহ এককভাবে বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য নিয়ে ছকটি সম্পূর্ণ পূরণ করে ক্লাসে উপস্থাপন করলো।
সবার কাজ উপস্থাপন হলে খুশি আপা এবং অন্যরা মনোযোগ দিয়ে শুনে প্রয়োজনীয় মতামত দিলেন। শেষে খুশি আপা বললেন, এই কাজটা করতে কেমন লাগল তোমাদের?
ক্লাসের সবাই একসঙ্গে বলল, খুব ভালো লেগেছে আমাদের।
খুশি আপা বললেন, তোমরা সবাই সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান এবং সেগুলো কীভাবে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সে সম্পর্কে নিশ্চয় খুব ভালো ধারণা পেয়েছ?
সবাই জোরে হ্যাঁ বলল।
খুশি আপা: তোমরা কি এ বিষয়ে আরও কিছু কাজ করতে চাও?
সবাই বললো, হ্যাঁ আপা। আমরা করতে চাই।
খুশি আপা: চলো আমরা সবাই মাটি, কাপড়, কাঠি, ডিমের খোসা বা এমন কোনো উপাদান দিয়ে সংস্কৃতির কিছু নিদর্শন বানাই। সবাই খুব উল্লসিত হয়ে কে কি বানাবে তার পরিকল্পনা করতে শুরু করে দিল। সবাই বাড়িতে গিয়ে বড়দের সাহায্য নিয়ে সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান তৈরি করে স্কুলে নিয়ে আসবে।
ছবি: সংস্কৃতির বিভিন্ন নিদর্শন যেমন, মাটির পুতুল, কলসি, ঘরবাড়ি, ডিমের পুতুল, কাপড়ের পুতুল ইতাদি
দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের সংস্কৃতি
খুশি আপা বললেন, আমরা তো আমাদের দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারলাম। তোমরা কি অন্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানো? সবাই না বলল। তখন ক্লাসের সবাই মিলে ঠিক করল, তারা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে।
খুশি আপা বললেন, আমিও তোমাদের সঙ্গে আছি। তাহলে আমাদের এই কাজের নাম কী হতে পারে? আনাই বলল, 'দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের সংস্কৃতি' হলে কেমন হয়?
সবার নামটা পছন্দ হলো। আগে শেখা অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে ওরা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানবে, ছবি সংগ্রহ করবে। জানা আছে এমন বিভিন্ন নিদর্শন তৈরি করবে এবং স্কুলে নিয়ে আসবে।
সেদিন স্কুলে মেলা। সবাই বেশ অনেক দিন ধরে মেলার প্রস্তুতি নিয়েছে। স্কুল আজ অন্যরকম সাজে সেজেছে। সবাই টেবিল ও ডেস্ক দিয়ে নিজেদের স্টল তৈরি করল।
অন্বেষা, নিসর্গ আর রহিমা সবার আনা কাপড়ের পুতুল, ডিমের পুতুল, মাটির পুতুলসহ সংস্কৃতির নিদর্শনগুলো সাজিয়ে রাখল।
রাজীব, নীলা ও দীপা বিভিন্ন ভাষায় লেখা মা, স্কুল, বাড়ি, দেশ এ শব্দগুলো ক্লাসের বিভিন্ন জায়গায় টাঙিয়ে রাখল।
ক্লাসের সবাই মিলে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জীবনযাপন সম্পর্কে আলোচনা করল। ওরা পুতুল, ঘরবাড়ি, পোশাক-আশাক এসব তৈরি করে নিয়ে এসেছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য। নিয়েও একটা স্টল সাজানো হলো।
কেউ কেউ বাড়ির খাবার এনেছে। আনাই, মাহবুব ও রূপা বিভিন্ন খাবার সাজিয়ে রাখল উলে।
একটা স্টল সাজানো হয়েছে দক্ষিণ এশীয় সংস্কৃতির নিদর্শন দিয়ে। যারা পেরেছে তারা এসব দেশের সাংস্কৃতিক নিদর্শন সংগ্রহ করেছে। কেউ কেউ মাটি, কাপড়, কাগজসহ বিভিন্ন উপাদান দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক নিদর্শনের মডেল বা নমুনা তৈরি করে এনে স্টলে সাজিয়েছে। সেখানে ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান প্রভৃতি দেশের সাংস্কৃতিক নিদর্শন রাখা আছে।
আরেকটা স্টলে রাখা আছে ওদের তৈরি করা মানচিত্র। বাড়িতে তৈরি স্কুলের মানচিত্রগুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। সেখানে ওদের তৈরি পারিবারিক পরিভ্রমণ মানচিত্রও সাজানো আছে। তাদের তৈরি আছে আমি
"এখন মানচিত্রে'। ভাষা স্টলে আমাদের দেশ, দক্ষিণ এশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কিছু ভাষার বই, পত্রিকা, বর্ণমালা, গান, কবিতা প্রভৃতি প্রদর্শন করা হয়েছে।
স্কুলের সবাই আজ ওদের মেলায় বেড়াতে এসেছে। সব শিক্ষক, অন্য ক্লাসের বন্ধুরাও এসেছে মেলায়। ক্লাসের সব বন্ধু দায়িত্ব ভাগ করে নিল। ২/৩ জন করে প্রতি স্টলে দাঁড়াল, অন্যরা সবার সঙ্গে মেলায় এক এক করে সব স্টলে ঘুরতে লাগল। মেলা ঘোরা শেষ হলে ওরা স্টলে এসে অন্যদের মেলায় ঘোরার সুযোগ করে দিল।
সারা দিন ওরা মেলায় ঘুরে, বিভিন্ন রকম খাবার খেয়ে, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নানা উপকরণ দেখে, বিভিন্ন ভাষার বর্ণমালা দেখে খুব আনন্দ করে দিন কাটাল। তারপর আত্মপরিচয়ের মেলা থেকে খা শিখেছে তা দলগতভাবে একটি অ্যাসাইমেন্ট করলো।
চলো ওদের মতো আমরাও বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা এলাকার বড়দের সহযোগিতা নিয়ে সাংস্কৃতিক উপাদান নিয়ে এলাকায় বা বিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক মেলা আয়োজন করি এবং অ্যাসাইনমেন্ট করে জমা |
Read more